Saturday, June 10, 2017

ফ্রিল্যান্সিং: নিজেকে মূল্যায়ন করতে শিখুন এবং ছাড়িয়ে যান নিজের স্বপ্নের সীমানা

যাক অবশেষে আমিও লিখতে পারলাম যে, কাজের চাপে লেখারই সময় পাইনা। আগে অনেক স্বপ্ন দেখতাম আমিও একদিন অভিজ্ঞদের মত বলবো “কাজের চাপে লেখারই সময় পাইনা।’’ হয়তোবা বলবেন এতই অভিজ্ঞ হয়ে গেছেন? না ভাই ফ্রিল্যান্সিং এ নিজেকে আমি এখনও শিশু মনে করি এবং নিয়মিত শিখছি।
আচ্ছা এবার মূল কথায় আসা যাক।
আজকে মূলত আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আপনারা সবাই জানেন ডাটা এন্ট্রি, ওয়েব রিসার্চ, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, এস ই ও, এস এম এম এই ধরনের কাজ গুলোতে কম্পিটিশন কেমন। মাঝে মাঝে ১ ঘন্টায় ২০০ এর বেশি আবেদন পড়ে। এখানে অভিজ্ঞদেরও খুব ভালো রেটে কাজ পেতে সমস্যা হয়। আর আপনি যদি নতুন হন তাহলে তো কথায় নেই। নতুনদের যখন বিড করতে করতে হতাশা পেয়ে বসে তখন তারা বাধ্য হয়েই খুব কম রেটে বিড করা শুরু করে। কিছু কিছু ক্লায়েন্ট সুযোগটা নেয় এবং নামমাত্র মুল্যে কাজটা করায়। আর আমরাও ভাবি বেশি রেটে বিড করলে মনে হয় কাজটা আর পাবোনা।
নতুন ফ্রিল্যান্সাররা ভুলটা এইখানেই করে। বলতে দ্বিধা নেই যে আমিও ভুলটি করেছি। প্রথম কাজ করি ১ ডলার প্রতি ঘণ্টায়। তবে ১ ডলারের নিচে কখনো নামিনি। এমনকি যখন আমি ওডেস্কে ৬০০ ঘণ্টা কাজ সম্পন্ন করলাম তখনও আমার আওয়ারলি রেট ছিল ১-২ ডলারের মধ্যে। আমি ভাবতাম এইসব কাজের জন্য মনে হয় প্রতি ঘন্টায় ১-২ ডলারই বেশি। এরপর ফেইসবুকে ওডেস্ক হেল্প নামক একটা গ্রুপে জয়েন করলাম এবং ২ দিনেই আমি আমার ভুলটা বুঝতে পারলাম। বলতে লজ্জা নেই যে ওডেস্ক হেল্প গ্রুপে জয়েন করার আগ পর্যন্ত নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মুল্যায়ন করতে পারিনি। গ্রুপে এক্সপার্টদের পোস্ট গুলো পড়তে পড়তে কিছু বিষয় নিশ্চিত হলাম এবং নিজেকে নিয়ে ভাবা শুরু করলাম। নিজেকে কিছু প্রশ্ন করলাম এবং তার উত্তর খুঁজে বের করলাম। প্রশ্নগুলো এই রকমঃ
১। আমি যে কাজ গুলো করি তাতে আমার দক্ষতা কতটুকু?
উত্তরঃ ১০০% । প্রায় সব গুলো কাজই আমি সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।
২। আমার ক্লায়েন্টদের আমি কি পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পেরেছি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। কারন আমার প্রায় সবগুলো কাজে বায়ারের সুন্দর একটা ফিডব্যাক এবং সুন্দর একটা মন্তব্য আছে।
৩। আমি কি অভিজ্ঞদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো?
উত্তরঃ হ্যাঁ। কারন আল্লাহর রহমতে কাজ পেতে তো এখন সমস্যা হয়না এবং কাজের মানটাও তাদের সমান।
তাহলে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হলে আমি কেন এতো সস্তায় কাজ করব?
তখন থেকেই আমি লক্ষ্য স্থির করলাম আমার দক্ষতা আরো বাড়াতে হবে। ক্লায়েন্টদের আরো ভালো সার্ভিস দিতে হবে তাহলে আমার কাজের মূল্যও বাড়বে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখনও কাজ করে যাচ্ছি।
বর্তমানে আমার ২ টা জব রানিং আছে। ২ টা ক্লায়েন্টই খুব ভালো। বলতে গেলে ওনারা আমার ফিক্সড ক্লায়েন্ট। ওনাদের বেশিরভাগ জব আমিই করি। ক্লায়েন্টদের সাথে আমার যোগাযোগ খুবই ভালো। তো তাদের প্রফেশনালি এবং স্মার্টলি বললাম তোমরা কি আমার আওয়ারলি রেটটা কন্সিডার করবে। আমি জানতাম উত্তরটা হ্যাঁ ই হবে এবং তাই হল। আমাকে বলল পরের সপ্তাহ থেকে তোমার আওয়ারলি রেটটা বাড়বে। তাও আবার বর্তমানে যে রেটে কাজ করছি তার তিন গুন। আমিতো মহা খুশি। কিন্তু এখনো মাথাই একটা জিনিসই কাজ করতেছে আর সেটা হল নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। থেমে গেলে হবে না কারন আমি এখানে থেমে থাকতে আসিনি। আমি এসেছি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে, আমার দেশকে আরো এক ধাপ উপরে নিয়ে যেতে।
এইবার নতুনদের প্রতি কিছু উপদেশ এবং অনুরোধ। কখনোই খুব কম রেটে কাজ করবেন না। এতে আপনারই ক্ষতি। কম রেটে কাজ করলে আপনি সহজে আপনার আওয়ারলি রেট বাড়াতে পারবেন না। ভালো কাজ পাবেন না। কম রেটে কাজ করলে ক্লায়েন্ট ভাববে আপনার কাজের কোয়ালিটি খুব খারাপ তাই আপনার রেটও কম। তাহলে প্রশ্ন করবেন ভাই কাজ পাবো কিভাবে? নিচের ধাপগুলো অনুসরন করুন ইনশাল্লাহ কাজ পাবেনই।
১। ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা অর্জন করুন যেন কাজের বর্ণনা বুঝতে পারেন এবং ক্লায়েন্টের সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারেন।
২। আপনি যে বিষয়ে কাজ করবেন সেই বিষয়ে পুরোপুরি দক্ষতা অর্জন করুন। মনে রাখবেন কাজ না জেনে বিড করা মহাপাপ।
৩। আপনার প্রোফাইলটাকে প্রফেশনাল লুক দিন। প্রোফাইল দেখলেই যেন বোঝা যায় আপনি প্রফেশনাল।
৪। পোর্টফলিও তৈরি করুন সুন্দরভাবে।
৫। কভার লেটার লেখবেন জবের সাথে সঙ্গতি রেখে। কপি পেস্ট করবেন না।
উপরের লেখাগুলো অনুসরন করুন আশাকরি উপকার পাবেন।
পরিশেষে আপনাদের সবার মঙ্গল কামনা করছি যেন আপনারাও ফ্রিল্যান্সিং এ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন এবং আমার দেশকে আরও এগিয়ে নিতে পারেন। আর আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

0 comments:

Post a Comment

 
.. .. .. .. - .. .. .. ..